Thursday, October 20, 2016

সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসছে?

 
Chin and bangladesh

সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। কাল শনিবার ও পরশু রোববার আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন। বিদায়ী কমিটির কারা নতুন কমিটিতে থাকছেন, কাদের পদোন্নতি হচ্ছে, নতুন কে কে আসছেন—এসব নিয়েই এখন মূল আলোচনা। তবে সাধারণ সম্পাদক পদেও পরিবর্তন আসছে বলে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের তিনজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, গত বুধবার রাতে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে নতুন ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রের খসড়া অনুমোদন করা হয়। বিকেল ৫টার পর থেকে শুরু হওয়া ওই সভা শেষ হয় রাত ১০টার দিকে। বৈঠকের আগে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর থেকেই সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তনের গুঞ্জন শুরু হয়। ২০১২ সালে দলের জাতীয় সম্মেলনের আগেও সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরের নাম আলোচিত হয়।
আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ২০০৯ সাল থেকে এই পদে আছেন। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সকালে ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে গেলে তাঁকে অনেক নেতা অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান। দুপুরের দিকে তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনস্থল দেখতে যান এবং পরে দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ের পাশে প্রিয়াঙ্কা কমিউনিটি সেন্টারে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সম্ভাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি  বলেন, ‘নেত্রী আমাকে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। কাউন্সিলরদের অনুমোদন সাপেক্ষে বাকিটা সম্মেলনের দিনই ঠিক হবে। চাঁদ উঠলে সবাই দেখবে।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে ওবায়দুল কাদেরের মধ্যে কিছুটা উচ্ছ্বাস তাঁরা লক্ষ করছেন। এ ছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদকদের কেউ কেউ নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের কাউন্সিলরদের সাধারণ সম্পাদকের পদে পরিবর্তনের বিষয়টি অনানুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, মসিউর রহমান এবং সাবেক সচিব রাশিদুল আলমের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। ভোটের জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং ব্যালট পেপারও সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক অতীতে দেখা গেছে, ভোটের বদলে সমঝোতার মাধ্যমেই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয় এবং কাউন্সিলররা তা একবাক্যে সমর্থন করেন। সভাপতির ওপর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেন কাউন্সিলররা। এবারও একই পদ্ধতিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নেতা নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দলের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন।
দুই দিনের এই সম্মেলনে ৬ হাজার ৫৭০ জন কাউন্সিলর ও সমসংখ্যক প্রতিনিধি অংশ নেবেন। গতকাল প্রিয়াঙ্কা কমিউনিটি সেন্টারে জেলা প্রতিনিধিদের হাতে কাউন্সিলর ও প্রতিনিধিদের কার্ড হস্তান্তর করা হয়। এ ছাড়া সাধারণ নেতা-কর্মীরাও সম্মেলন দেখার জন্য ঢাকায় এস ভিড় করছেন। দুই দিনে তিন বেলা প্রায় ৫০ হাজার লোকের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।
সম্মেলন উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে নানা রঙের পতাকা-ব্যানার ও প্ল্যাকাড শোভা পাচ্ছে। সড়ক বিভাজনে আলোকসজ্জাও করা হয়েছে। সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ভারত, চীনসহ ১১টি দেশের ৫৫ জন নেতা আসছেন।
এবার ৭৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৮টি পদ যুক্ত করে ৮১-তে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমান কমিটিরই বেশ কিছু পদ ফাঁকা আছে। নতুন পদ সৃষ্টি ও ফাঁকা পদ পূরণ—সব মিলিয়ে এবারের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বেশ বড় সংযোজনই আসছে। বাদও পড়তে পারেন অনেকে। কেন্দ্রীয় কমিটির চারজন নেতা গতকাল বলেন, কে দলে আসবেন আর কে যাবেন—সবকিছুই নির্ভর করছে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর।
গঠনতন্ত্র অনুসারে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ তিন বছর। বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে গত বছরের ডিসেম্বরে। দুই দফায় এক বছর সময় বৃদ্ধি করা হয়েছিল।
এক-এগারোর ধাক্কার পর আওয়ামী লীগের দলীয় সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে। ওই সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ একঝাঁক নতুন মুখ আসে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে। সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১২ সালে। দু-একটা পরিবর্তন করে প্রায় আগের কমিটিই রেখে দেওয়া হয়। ফলে বর্তমান কমিটির নেতারা প্রায় সবাই সাত বছর ধরে দায়িত্বে আছেন।
একজন জ্যেষ্ঠ নেতা প্রথম আলোকে লেন,এই কমিটির নেতাদের নিয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন করেছেন শেখ হাসিনা। পরে ৯৩ দিনের বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলন মোকাবিলা করেছেন। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের মতো বিষয় সামলানো গেছে। প্রায় সবগুলো সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন সমাপ্ত করে জাতীয় সম্মেলনে হচ্ছে। তাই এই কমিটির নেতারা নিজেদের ‘বিজয়ী’ মনে করেন। অন্যদিকে এই কমিটির আমলেই দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি সরকারের ভেতর মিশে গেছে। যে কাজ দলের করা উচিত, এমন কাজে সরকারের বেশি সক্রিয়তা দেখা গেছে।
এবারই প্রথম দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা ছাড়া বঙ্গবন্ধু পরিবারের আরও তিন সদস্য আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কাউন্সিলর হিসেবে যোগ দিচ্ছেন। শেখ হাসিনা এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতারা পদাধিকারবলে কাউন্সিলর। গঠনতন্ত্র অনুসারে, অন্যদের মহানগর বা জেলা কমিটির মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হয়। প্রতি ২৫ হাজার মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে একজন কাউন্সিলর নির্বাচন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানাকে কাউন্সিলর নির্বাচন করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটি। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় কাউন্সিলর হয়েছেন রংপুর থেকে। প্রধানমন্ত্রীর জামাতা খন্দকার মাশরুর হোসেনকে কাউন্সিলর নির্বাচন করেছে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন ও শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের নাম কাউন্সিলরের তালিকায় থাকলেও তা বুধবার বাদ দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল দুজন নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাই ও বোনের পরিবারের সদস্যরা আগে থেকেই রাজনীতি করছেন। অনেকে মন্ত্রী, সাংসদ ও দলের বিভিন্ন স্তরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের কাউন্সিলর হয়ে আসা নতুন ঘটনা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, অতীতে সম্মেলনের আগে দলের নেতাদের মধ্যে দলাদলির সৃষ্টি হতো। এবারই প্রথম প্রকাশ্যে কোনো দলাদলি নেই। কেউ কোনো পদে প্রার্থী নন। দলের এই ঐক্য শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের কারণে হয়েছে।
পদ-পদবির অনিশ্চয়তায় নেতারা: ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি হলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদ বাড়বে চারটি। একটি করে যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদক, দুটি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের পদ যুক্ত হবে।
বর্তমান গঠনতন্ত্রে সভাপতি শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদকসহ (পদাধিকারবলে) আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যের পদ ১৫টি। জোহরা তাজউদ্দীন মারা গেছেন, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বাদ পড়েছেন এবং দুটি পদ আগে থেকেই শূন্য ছিল। নতুন চারটি পদ যুক্ত হলে আগের সবাইকে রেখে দিলেও নতুন করে আটজন নেতার প্রবেশের সুযোগ থাকছে।
দলটির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, সভাপতিমণ্ডলীতে সব অঞ্চলের প্রতিনিধি রাখার চেষ্টা করা হবে। সে ক্ষেত্রে সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের নেতাদের কারও কারও সুযোগ মিলতে পারে। সমতা আনতে নারীর সংখ্যাও বাড়তে পারে। আরেকটা বড় আলোচনার জায়গা হচ্ছে উপদেষ্টা পরিষদে থাকা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সভাপতিমণ্ডলীতে ফিরছেন কি না।

No comments:

Post a Comment